মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:: ভারত স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে দেশের মানুষের বিরাগভাজন হলে কিছু করার নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিবিসি বাংলাকে দেয়া তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। এতে তারেক রহমান বিএনপির রাজনীতির পরিবর্তন, ভারতের সাথে সম্পর্ক, সংস্কার নিয়ে কথা বলেছেন।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও বিবিসি বাংলার সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোল। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সাক্ষাৎকার দেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব প্রকাশিত হয় আজ।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন? প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, বিষয়টি তো রাজনৈতিক। এটি তো কোনো ব্যক্তির বিষয় নয়। আমরা প্রথম থেকে যে কথাটি বলেছি যে আমরা চাই, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হোক। অর্থাৎ অনেক কিছুর মত বিভিন্ন বিষয় আছে- যেমন আমরা যদি মূল দুটি বিষয় বলি যে কিছু সংস্কারের বিষয় আছে, একইসাথে প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বাধীন নির্বাচনের একটি বিষয় আছে।
তিনি বলেন, মূলত কিছু সংস্কারসহ যেই সংস্কারগুলো না করলেই নয়, এরকম সংস্কারসহ একটি স্বাভাবিক সুষ্ঠু, স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করাই হচ্ছে বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। আমরা প্রত্যাশা করি, উনারা উনাদের উপরে যেটা মূল দায়িত্ব, সেটি উনারা সঠিকভাবে সম্পাদন করবেন। এটাই তো উনাদের কাছে আমাদের চাওয়া রাজনৈতিক দল হিসেবে।
বিবিসির বাংলার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। গত এক বছর ধরে ভারতে সাথে সম্পর্কে শীতলতা দেখা গেছে। বিএনপি সরকারে এলে এ ক্ষেত্রে কোনো পরবর্তন আসবে কিনা বা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেবেন কিনা।
জবাবে তারেক রহমান, এখন তারা যদি স্বৈরাচারকে সেখানে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। এটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের সাথে শীতল থাকবে। সো, আমাকে আমার দেশের মানুষের সাথে থাকতে হবে।
বিএনপি যদি সরকার গঠন করে তবে কূটনীতির ক্ষেত্রে মূলনীতি কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গুড কোশ্চেন। বিএনপির মূলনীতি একটাই- সবার আগে বাংলাদেশ। কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির নীতি সবার আগে বাংলাদেশ। আমার জনগণ, আমার দেশ, আমার সার্বভৌমত্ব। এটিকে অক্ষুণ্ণ রেখে, এটি স্বার্থ বিবেচনা করে, এই স্বার্থকে অটুট রেখে বাকি সবকিছু।
ভারতের সাথে সম্পর্ক নিয়ে অবস্থান জানতে চাওয়া হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমার মনে হয়, আপনি একটু আগে যে প্রশ্নগুলো করেছেন, সেখানে বোধহয় আমি ক্লিয়ার করেছি পুরো ব্যাপারটা। সবার আগে বাংলাদেশ। এখানে তো আপনি পার্টিকুলার (সুনির্দিষ্ট) একটি দেশের কথা বলেছেন।
এখানে ওই দেশ বা অন্য দেশ তো বিষয় না। বিষয় তো হচ্ছে, ভাই বাংলাদেশ আমার কাছে আমার স্বার্থ, আমি আগে আমার দেশের মানুষের স্বার্থ দেখব, আমার দেশের স্বার্থ দেখব। ওটাকে আমি রেখে আপহোল্ড করে আমি যা যা করতে পারব, আমি তাই করব।
বিবিসির বাংলার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, ভারতের কথা বিশেষভাবে আসছে যেহেতু সেটি বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ এবং বাংলাদেশের তিন পাশেই এই দেশটির সীমান্ত রয়েছে। এবং এটি নিয়ে আপনিও জানেন যে, বিভিন্ন সময়ে কথা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও কথা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সময় তো সম্পর্ক নিয়ে বললামই সেটা নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত বা কেমন থাকা প্রয়োজন- এ নিয়ে আপনার চিন্তা কি?
জবাবে তারেক রহমান বলেন, অবশ্যই আমি আমার পানির হিস্যা চাই। অবশ্যই আমি দেখতে চাই না যে আরেক ফেলানী ঝুলে আছে। অবশ্যই আমরা এটা মেনে নেব না।
বাংলাদেশের স্বার্থের প্রসঙ্গে আপনি বলছেন যে পানির হিস্যা চাওয়া এবং সীমান্ত হত্যার বিষয়টি নিয়ে আপনারা সোচ্চার থাকবেন? প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, না না, আমি উদাহরণ দিয়ে বললাম। দু’টি উদাহরণ দিয়ে বুঝালাম আপনাকে, যে আমাদের স্ট্যান্ডটা কি হবে। আমরা আমাদের পানির হিস্যা চাই। অর্থাৎ আমার দেশের হিস্যা, মানুষের হিস্যা আমি চাই, হিসাব আমি চাই।
তিনি আরো বলেন, আমার যেটা ন্যায্য সেটা আমি চাই। অবশ্যই ফেলানী হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আমি বুঝাতে চেয়েছি যে আমার মানুষের উপরে আঘাত আসলে অবশ্যই সেই আঘাতকে এভাবে আমি মেনে নেব না।
এর আগে সোমবার তার সাক্ষাতকারের প্রথম পর্ব প্রচারিত হয়। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রুতই দেশে ফিরবেন এবং নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানান। আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রত্যাশী হবেন কি না- এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারেক রহমান বলেন, এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের। আর দল মনোনয়ন দেবে কি না, সেটাও দলের সিদ্ধান্ত। আমার সিদ্ধান্ত নয়।